ব’ন্যার পা’নিতে ভাসছে সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলা। এতে প্রতিদিন প্লা’বিত হচ্ছে ন’তুন নতুন এলাকা। হাট-বাজার, বাড়িঘরে ঢুকছে পানি। ডুবে রয়েছে রাস্তাঘাট। বন্যার পানি ও পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়েছে সেতু।
সংযোগ রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। অসহায় লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। দুর্গত লোকজনের কাছে যে খাবার ছিল তা ফুরিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
এতে দুর্গত মানুষের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। খাবার পানির অভাবে ঝুঁকি নিয়েই অনেকে দূষিত পানি পান করছেন।
এতে করে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা রয়েছে। অনেক এলাকার নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় শৌচাগার সমস্যায় মানুষ চরম বিপাকে আছেন।
বন্যায় ভেসে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও পুকুর। পাশাপাশি অবকাঠামোগত ক্ষতিও বাড়ছে। সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে বানভাসি মানুষ। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন লোকজন।
ভারতের বরাক নদী হয়ে উজানের ঢল বাংলাদেশের সুরমা-কুশিয়ারায় ঢুকছে। এতে সিলেটে কিছু কিছু এলাকায় পানি একটু একটু কমছে আবার কোথাও কোথাও একটু একটু বাড়ছে।
তবে তা অত্যন্ত ধীরগতিতে। বন্যার পানিতে সিলেট বিভাগের বেশ কয়েকটি সাবস্টেশন ডুবে যাওয়ায় প্রায় ৭০ হাজার গ্রাহক তিন দিন ধরে বিদ্যুৎবঞ্চিত রয়েছেন।
সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
হাকালুকির হাওড়সহ ছোট-বড় সব হাওড় ডুবে গেছে। কাজ না থাকায় দিনমজুররা চরম বিপাকে পড়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট শহরের বাইরে সুরমা নদীর ওপরের অংশ থেকে পানি কিছুটা নেমেছে। এতে ওপরের অংশে যেমন বন্যা কমেনি, তেমনি তা এসে নিচের দিকে, বিশেষ করে সিলেট শহরে চাপ সৃষ্টি করেছে।
শহরের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে বৃষ্টির প্রবণতা নতুন করে বেড়েছে। এতে ভারতের আসামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই পানিও নেমে আসছে ভাটির দিকে।
সবমিলে আরও অন্তত ২৪ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিুাঞ্চলের কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতি একইরকম থাকতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে বাড়ছে। এই পরিস্থিতি আরও অন্তত ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
এতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী তথা সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই-কংস, ধনু-বাউলাই, মনু, খোয়াই ও মুহুরীর পানি সমতলে কয়েকটি পয়েন্টে সময়বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
বর্তমানে সুরমা তিনটি আর কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাটে বিপৎসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার ওপরে বইছে।